মঙ্গলবার আলাপকালে প্রধানমন্ত্রীর ফোনের ব্যাপারে এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করেন তামান্না। মঙ্গলবার স্থানীয় দৈনিক কল্যাণের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তামান্নাকে সম্মাননা দেয়া হয়।এ সময় প্রতিবেদকের কথা হয় তামান্নার সঙ্গে।অনুষ্ঠানে রিপন অটোস নামে এক প্রতিষ্ঠানের মালিক তামান্নার লেখাপড়া দায়িত্ব নেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনার ফোনকলের পর প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী অদম্য তামান্না আক্তার নূরা আরও বলেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেও একাকি পড়ালেখা করা তার জন্য অসম্ভব প্রায়।তিনি একা একা চলাফেরা করতে পারেন না।ফলে,তার মা তার সবকিছু দেখাশোনা করেন।ঢাকায় পড়তে গেলে মাকে সাথে নিতে হবে। মা গেলে ছোট দুটি ভাই-বোন কার কাছে থাকবে? ওদেরও যেতে হবে। মানে পুরো পরিবারকেই যেতে হবে।তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবেদন পাঠাতে বলেছেন।এসব সমস্যার কথা সেখানে লিখব।
দুই হাত না থাকা ও শুধু একপায়েই জীবনযুদ্ধে বেড়ে ওঠা লেখাপড়ার নজিরবিহীন সাফল্য দেখিয়েছেন তামান্না।প্রাথমিক সমাপনী থেকে এইচএসসি পর্যন্ত প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় তিনি জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন।অদম্য তামান্নার সাফল্য গণমাধ্যমে প্রচারের পর সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা আলাদাভাবে তাকে ফোন করেন।আর মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর পিএস কথা বলেন তামান্নার সাথে। পিএস দ্রুত আবেদন পাঠাতে বলেছেন।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দেন।এর আগে লন্ডন থেকে শেখ রেহেনাও কল করে কথা বলেন।সোমবার সন্ধ্যায় পড়াশুনার প্রস্তুতির সময় হোয়াটসঅ্যাপ কল রিসিভ করতেই বললেন ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছিলাম।আমি কি তামান্নার সাথে কথা বলছি?’কণ্ঠস্বর শুনে ঘোরের মধ্যে পড়ে যান তামান্না আক্তার নূরা। হয়ে পড়েন বাকরুদ্ধ।কাঁদতে থাকেন অঝোরে। অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে কান্না থামাতে বলেন।ঘোর কাটিয়ে আর কান্না থামিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম দেন তামান্না।এ সময় তামান্না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার ইচ্ছা এবং তার স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে চান।প্রধানমন্ত্রী তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’ আবেদন করতে।এই ট্রাস্টের মাধ্যমে তাকে সবধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে বলে তামান্নাকে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তামান্নার ৪ মিনিটের কথাপোকথনে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে একাধিকবার সাহস হারাতে নিষেধ করেন।বলেন,সাহস আর মনোবল থাকলে তুমি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে।’এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় তামান্নার হোয়াটসঅ্যাপে নাম্বারে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটবোন শেখ রেহেনা।ফোন রিসিভ করতেই তামান্না শোনেন,আমি লন্ডন থেকে শেখ রেহেনা বলছি।আমি কি তামান্না নূরার সাথে কথা বলছি?তখনই কান্না শুরু তামান্নার।এ সময় শেখ রেহেনা বলেন,কেঁদো না। টানা ভালো রেজাল্ট করায় তোমাকে অভিনন্দন।তোমার সংগ্রামের কথা শুনেছি।তুমি খুব সাহসী।তুমি এগিয়ে যাও।আমরা দুই বোন বেঁচে থাকা পর্যন্ত তোমাকে সহযোগিতা করে যাব।যারা সাহস রেখে চলে তারা কখনও হেরে যায় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর শেখ রেহেনার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পেরে দারুণ খুশি তামান্না। বলেন,প্রথমে দুজনের সাথেই কথা বলতে গিয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।প্রচন্ড আবেগে থর থর করে কাঁপছিল আমার ভেতরটা।মনে হচ্ছে আমার জীবনে সৃষ্টি হয়েছে ইতিহাস।এই অনুভূতি আসলে ভাষায় বোঝানো যাবে না।এতটাই আনন্দিত হয়েছিলাম যে,হাসতে পারিনি,কেঁদে ফেলেছিলাম।তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন,গত ২৪ জানুয়ারি যশোরের জেলা প্রশাসকের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর চিঠি লিখেছেন তামান্না নূরা।চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন তামান্না।সেই চিঠির প্রেক্ষিতে সোমবার বিকাল ও সন্ধ্যায় পৃথক দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে অডিওকলে ফোন দিয়ে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা।একই সাথে তারা দুই বোনই তামান্নার স্বপ্নপূরণে যেকোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেন।তামান্নার লেখা চিঠি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।তামান্নার আঁকা বিভিন্ন ছবিও দেওয়া হয় ওই চিঠির সাথে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন,পরম করুণাময় আল্লাহর অসীম দয়ায় তামান্নার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা কথা বলেছেন।সবার দোয়ায় তামান্নার স্বপ্ন পূরণ হবে আশা করি।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না নূরা।তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। রোববার প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসির মতো এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। একই ফল করেছিলেন পিইসি ও জেএসসিতেও।
বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার(ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী।তিন ভাইবোনের মধ্যে তামান্না সবার বড়।ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণির ছাত্র। (সূত্র -বাসস)
কমেন্ট করুন